সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫

নাজির উদ্দিনকে চাকরির কথা বলে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়। এখন তাঁর খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার। উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন তাঁর বাবা, স্ত্রী ও সন্তান। নাজিরের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কুরমুশী গ্রামে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, নাজির উদ্দিনকে প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির কথা বলে নেওয়া হয় রাশিয়ায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর পাঠানো হয় সামরিক প্রশিক্ষণে। ১৪ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর পাঠানো হয় রণাঙ্গনে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে যাওয়ার পর থেকে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই নাজিরের। চিন্তায় অস্থির তাঁর বাবা, নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন স্ত্রী। শিশুসন্তান আছে বাবার অপেক্ষায়।

৩৭ বছর বয়সী নাজির উদ্দিনের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কুরমুশী গ্রামে। অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ফয়েজ উদ্দিনের একমাত্র সন্তান তিনি। 

পরিবারের সদস্যরা বলেন, ২০১৭ সালে নাজির ইরাকে গিয়েছিলেন। তিন বছর সেখানে চাকরি করে দেশে ফিরে আসেন। নিজ এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য করার উদ্যোগ নেন, কিন্তু সফল হননি। তাই আবার বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর সঙ্গে ঢাকার মিরপুর এলাকার এসপি গ্লোবাল নামের একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের মামুন নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে রাশিয়ায় যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১২ লাখ ২০ হাজার টাকায় গত ১৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা হন নাজির উদ্দিন। দুবাই হয়ে রাশিয়ায় পৌঁছান তিনি। তারপর তাঁকে একটি ক্যাম্পে কয়েক দিন রাখা হয়। কিছুদিন পর সেখান থেকে বিমানে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়। ওই জায়গায় ১৪ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে ইউক্রেন সীমান্তে নেওয়া হয়।

গত ১৬ এপ্রিল সকালে নাজির টেলিফোনে কান্নাকাটি করে বাবা ও স্ত্রীকে জানান, তাঁদের ইউক্রেনের সম্মুখযুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেদিনের পর থেকে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই নাজিরের।

সোমবার দুপুরে ঘাটাইলের কুরমুশী গ্রামে নাজিরদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের চিন্তায় উদ্বিগ্ন বাবা ফয়েজ উদ্দিন। ছেলের খবরের আশায় প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছেন। 

ছেলেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ সরকার ও রুশ দূতাবাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফয়েদ উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির আশা নিয়ে রাশিয়ায় গেছে। তাকে কেন যুদ্ধে পাঠানো হলো? তাকে যারা চাকরি দেওয়ার মিথ্যা কথা বলে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছে, তাদের বিচার চাই।’

চিন্তায় অস্থির নাজিরের স্ত্রী কুলসুম বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নাজির। রাশিয়ায় যাওয়ার পর যখন যুদ্ধের প্রশিক্ষণে পাঠানোর কথা জানতে পারেন, তখন থেকে নাজির প্রতিদিন টেলিফোন করে কান্নাকাটি করতেন। ১৬ এপ্রিলের পর থেকে তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন, এ বিষয়ে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

কুলসুম বেগম বলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ের বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। সেও প্রতিদিন বাবার খবরের আশায় মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সরকারপ্রধানের কাছে আমার দাবি, আমার স্বামীকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক।’

নিজস্ব প্রতিবেদক/ গ্রামীণ বার্তা

সম্পর্কিত সংবাদ

ধনবাড়ী নওয়াব শাহী মসজিদে ফুটেছে ম্যাগনোলিয়া

টাঙ্গাইল

ধনবাড়ী নওয়াব শাহী মসজিদে ফুটেছে ম্যাগনোলিয়া

নওয়াব শাহী জামে মসজিদের উত্তর পাশে দেয়ালঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা গাছে ফুটেছে এ ফুল। ১২টি পাপড়ি সাজানো দুই সারিত উপরেরগুলো ছোট,...

মানবাধিকার সংকটে ইউনুস সরকারের ভূমিকা

রাজনীতি

মানবাধিকার সংকটে ইউনুস সরকারের ভূমিকা

গত আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী...

ভারতে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান

বিশ্ব

ভারতে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান

উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন গ্রুপ থেকে গানগুলো অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা গানগুলো বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম...

দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া

বাংলাদেশ

দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া

হিথরো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সরাসরি লন্ডনের ডেভেনশায়ার প্লেসে ‘লন্ডন ক্লিনিক’ এ ভর্তি করা...

'আমার বিরুদ্ধে ১১১টি মামলা, ১১ বার জেলে গিয়েছি'

বাংলাদেশ

'আমার বিরুদ্ধে ১১১টি মামলা, ১১ বার জেলে গিয়েছি'

সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লা হিল আমান আজমীর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি একজন মেধাবী সেনা কর্মকর্তা ছিলেন, যাক...

জনবলসংকটে টাঙ্গাইল মেডিকেল

টাঙ্গাইল

জনবলসংকটে টাঙ্গাইল মেডিকেল

আন্তবিভাগে অপারেশন, সিজারিয়ান অপারেশন ও স্বাভাবিক প্রসবসেবা চালু রয়েছে। এ ছাড়া রক্তসহ সব ধরনের পরীক্ষা, এক্স-রে, সিটিস্ক...